গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠিতে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য সদর হাসপাতালের সাধারণ রোগীরা অতিষ্ঠ। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়। মেইন আউটডোরে তিনজন এরিট্রোফার্মার রিপ্রেজেন্টেটিভ এক মহিলাকে ঘিরে রেখে মোবাইলে তার প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলছে। এদের মধ্যে এরিট্রোর্ফামার চিন্ময় বরকেলামসহ আরো দুইজন মিলে এই কাজ করছে। এ সময় সাংবাদিকরা তাদের ছবি তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা দ্রুত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। এরা ঐ দিন বিশটিরও অধিক প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হলো এখানে ওষুধ কোম্পানির কাছে ডাক্তাররা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তারা অনেকটা ‘চুক্তিবদ্ধ’ হয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করছেন। আবার ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন মনিটর করে কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা। অর্থাৎ তাদের কোম্পানির ওষুধ ডাক্তার প্রেসক্রাইব করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীদের প্রেসক্রিভশনের ছবি মোবাইলে তুলে কোম্পানির বসকে পাঠাচেছন। ঝালকাঠিতে ওষুধ বিপণনের ক্ষেত্রে এভাবে একটা পুরো চক্র কাজ করছে।
ঝালকাঠির হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। তারা রোগীদের কাছ থেকে ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রেখে দেয়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি তাদের ওষুধের বিক্রি বাড়াতে ডাক্তারদের অনৈতিক উপকৌটন দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাক্তার বলেন, ‘ওষুধ বিপণনের প্রয়োজনে ডাক্তারদের উপঢৌকন দেয়ার প্রক্রিয়াটি এখন ওপেন সিক্রেট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিপণন খরচের বড় অংশ অনৈতিকভাবে ব্যয় হচ্ছে।’ নাম প্রকাষ না করার শর্তে এক মেডিকেলে রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, ওষুধ শিল্পের প্রচারণার বেশ গুরুত্ব রয়েছে। তবে দেশে ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রচারণার বাইরেও কিছু কাজ করে যা একেবারেই অনৈতিক। যেমন ওষুধ কোম্পানির লোকজন রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তোলে অফিসে কিংবা কোথাও সেটা দিয়ে দেয়। হয়তো ডাক্তারদের সঙ্গে একটা আঁতাত থাকে। ডাক্তাররা কোন কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশন করেছেন সেটা প্রমাণের জন্য হয়তো এই ছবি তোলা হয়। দেখাগেছে প্রেসক্রিপশনে মহিলাদের একটি রোগের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয় উল্লেখ করে ঔষধ দিয়েছে ‘কিন্তু তারা সেগুলো না মেনে নিজেদের স্বার্থে রোগীদের বিরক্ত করে সেই ছবিগুলো তুলছে। ফলে হাসপাতালের আউটডোর সার্ভিসগুলো প্রচন্ড রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ ওষুধ কোম্পানির লোকেদের ভিড় লেগেই থাকে। যেখানে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে রোগী দাঁড়াতে পারে না ঠিক মতো সেখানে ওষুধ কোম্পানির লোকদের এত ভিড় চোখে পড়ার মতো।
ঝালকাঠির সাবেক জেলা প্রশাসক মো.হামিদুল হক দায়িত্বে থাকার সময়। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১ট পর্যন্ত কোন ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রচারণা করতে পারেনি। তারা এই সময়ের মধ্যে ডুকতেও পারবেনা বলে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সাবেক এ জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেছিলেন, ‘বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনও ভাবেই তারা হাসপাতালে ঢুকতে পারবে না। এই নিয়ম তিনি ঝালকাঠিতে থাকা কালিন সময় মানা হলেও এখন কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এই নিয়মটা মানা হচ্ছে না। ফলে ওষুধ কোম্পানির লোকেরা ডাক্তারদের এত বেশি ব্যস্ত রাখে যে রোগীরা সুযোগই পায় না।
‘অথচ এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রচারণার অনেকগুলো মাধ্যম আছে। কিন্তু তা না করে কোম্পানির মালিকগুলো নিয়মকানুনই মানছে না। ঝালকাঠি জেলায় ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ বা বিক্রয় প্রতিনিধি অনেক। ঝালকাঠি সদরে ১৫২ জন, নলসিটিতে ৩০জন, রাজাপুরে ৫৫ জন ও কাঠাঁলিয়ায় আছে ২০ জন। তাহলে জেলায় মোট রিপ্রেজেন্টেটিভ আছে ২৫৭ জন। হাসপাতালে আসা রোগীদের অভিযোগ তারা এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার মো.আবুয়াল হাসান বলেন,আসলেই এই বিষয়টি দুঃখজনক আমি আমার উর্দ্ধর্তন কর্তিপক্ষের কাছে অবহিত করব।
Leave a Reply